×
ব্রেকিং নিউজ :
চাঁদপুরের কচুয়া ও ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ২৮ জনের মনোনয়নপত্র জমা কক্সবাজার সৈকতে সার্ফিং প্রশিক্ষণ শুরু তাসকিন-সাইফুদ্দিনের বোলিং নৈপুণ্যে ১২৪ রানে অলআউট জিম্বাবুয়ে সরকারকে চাপে ফেলতে গিয়ে বিএনপি নিজেরাই চাপে আছে:ওবায়দুল কাদের খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি দেশের ২৫ জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামীকাল বন্ধ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টস জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ জাতির পিতার সমাধিতে পানি সম্পাদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের শ্রদ্ধা সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সাফল্যের প্রশংসায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘নেসা সেন্টার’ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভা আগামীকাল
  • প্রকাশিত : ২০২৩-০৪-২৫
  • ৪৭৬৫ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক
জয়পুরহাট  জেলার ‘কড়ই-কাদিরপুর গণহত্যা দিবস’ আগামীকাল ২৬ এপ্রিল। এ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এ দিনে জেলা শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরত্বে সদর উপজেলার কড়ই ও কাদিরপুর গ্রাম দু’টিতে তৎকালিন স্বাধীনতা বিরোধী মৌলবাদীদের প্ররোচণায় ও তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় পাকসেনারা মধ্যযুগীয় কায়দায় নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল ৩৭১ জন নিরীহ হিন্দু ধর্মাবলম্বী গ্রামবাসীকে। নিহতদের অধিকাংশই  মৃৎ শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। লুটপাট করা হয়েছিল তাদের টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ। দখল করা হয়েছে জায়গা-জমি, বসত বাড়িও। জেলাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবির প্রেক্ষিতে এ বধ্যভূমিতে স্থানীয় জেলা পরিষদের উদে ্যাগে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হলেও স্বাধীনতার ৫২ বছরেও এ নৃশংস ও বর্বর গণহত্যার সঙ্গে জড়িত স্থানীয় দোসর দের বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয়রা।     
প্রত্যক্ষদর্শী কড়ই-কাদিপুর গ্রামের কেরামত আলী ও কিনু মিয়া  বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল রাতে কড়ই-কাদিরপুরের পাশে হানাইল, বম্বু গ্রামে মওলানা মোসলেম উদ্দিনের বাড়িতে একটি ষড়যন্ত্রমূলক বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে যোগদেন কড়ই গ্রামের মওলানা জসিম উদ্দিন ও মওলানা আব্দুল মান্নান। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় কড়ই-কাদিপুর গ্রাম দু’টিতে পরের দিন ( ২৬ এপ্রিল) অপারেশন চালনো হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৬ এপ্রিল সকালেই পাকসেনারা মওলানা মোসলেম উদ্দিনের বাড়িতে নাস্তা করার সময় আশ-পাশের হানাইল-বম্বু, সগুনা, বামনপুর, হেলকুন্ডা, ছোট হেলকুন্ডা, মীরগ্রাম, মুরারীপুর, হিচমী গ্রামের লোকজন পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লেøাগান দিতে দিতে কড়ই-কাদিরপুর গ্রাম দু’টি ঘেরাও করে। এ সময় পাকিস্তানী সৈন্যরা ফাঁকা গুলি বর্ষণ করলে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন প্রাণ ভয়ে ছুটোছুটি করতে থাকে। মওলানা জসিম উদ্দিন তখন তাদেরকে মারা হবেনা এ মর্মে আশ্বাস দিয়ে মাঠের মধ্যে জড়ো হতে বলেন। এরপর ছয় পাকসেনা তিনভাগে ভাগ হয়ে লাইন করে গুলি চালায়। এ ঘটনায় অনেকের মৃত্যু হলেও আধা মৃত অবস্থায় অনেকে বাঁচার জন্য আকুতি-মিনতি করতে থাকেন, কেউ পানি পানি করে চিৎকার করতে থাকেন। স্থানীয় সহযোগিরা এ সময় পানির বদলে প্রসাব খেতে দেয়। এতেই ক্ষান্ত নয় মৃতদের সাথে আধা মৃতদেরও বিভিন্ন স্থানে করা গর্তে মাটি চাপা দেয়া হয়। এ নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হওয়াদের মধ্যে রয়েছেন আষাড়– কান্ত, কাঁচা কান্ত, মন্টু কুমার, তরমুজা কুমার, ডা: কৃঞ্চপদ, বৈদ্দী, গীরেন, মহাভারত, কেশর, সুবল, শেখর, মংলা, খিতনা, হরিন, যুগীন, রবি পাল, জিতেন পাল, ধীরেন পাল, গোপেশ, প্রাণ বন্ধু,  শ্রীচরন, গবীন্দ পাল, নারায়ন পাল, যোগেন চন্দ্র বর্মন, খোকা বর্মন, সুভাষচন্দ্র পাল, বিদ্যৎ চন্দ্র পাল, ভগিরত চন্দ্র পাল, গীবত চন্দ্র, মল্লিকা প্রমূখ। কড়ই-কাদিরপুর গ্রামে ১৯৭১ সালে ৩ শ ৬৬ টি মৃৎ শিল্পের সঙ্গে জড়িত হিন্দু- ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবার ছিল। এ নৃশংস গণহত্যার পরে দু/একটি পরিবার থাকলেও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে নিহত হওয়ার পর তারাও নানা হুমকি ধুমকিতে প্রাণ ভয়ে ভিটে-মাটি ছেড়ে পালিয়ে যান। তাদের প্রায় ৯ শ বিঘা জমি দখলে নেয় স্বাধীনতা বিরোধী স্থানীয় দোসররা । এ হত্যাযজ্ঞে পিতা-মাতাসহ আত্মীয়স্বজন হারানো দশরত কুমার (৬৮) বলেন, জীবিত থাকতেই পিতা-মাতার হত্যাকারীদের বিচার দেখে যেতে পারলে আত্মা শান্তি পেতো। স্বামী সুবল চন্দ্রকে হারানোর বেদনা আজও বুকে লালন করছেন স্ত্রী সুধা রানী। সেদিনের নৃশংসতার কথা বলতে গিয়ে আজও আঁৎতে ওঠেন তিনি।  জয়পুরহাটের ‘কড়ই-কাদিরপুর গণহত্যা দিবস উপলক্ষে  স্থানীয় শিক্ষা ,সমাজসেবা ও সাংস্কৃতিক- সামাজিক সংগঠন ”সৃজনী’র উদে ্যাগে আয়োজিত কর্মসূিচর মধ্যে রয়েছে শহীদদের স্মরণে স্মরণসভা ও ‘কড়ই-কাদিরপুর বধ্যভূমিতে শহীদ স্বজনদের শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন হিসেবে পুস্প স্তবক অপর্ণ। সৃজনী’র প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান চেয়ারম্যান বিশিষ্ট্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ম, নূরুন্নবী বলেন, স্বজন হারানো লোকজন এখনো গণহত্যার স্মৃতিচিহ্ন বুকে ধারণ করে বিচারের আশায় দিন গুনছেন। অন্যান্য বছরের মতো এবারও নানা আয়োজন রয়েছে কড়ই-কাদিরপুর গণহত্যা দিবস উপলক্ষে। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জয়পুরহাট জেলা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন স্বাধীনতার ৫২ বছরেও এ নৃশংস ও বর্বর গণহত্যার বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে এ নৃশংস হত্যাযজ্ঞের বিচার হবে বলে তিনি আশা করেন। উল্লেখ্য, সেই সময় স্থানীয় ভাবে গঠিত শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিএনপি নেতা আব্দুল আলীম ( পরে আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীর দায়ে সাজা প্রাপ্ত হয়ে মৃত)। ১৯৭১ সালের জয়পুরহাটে রাজাকার আলবদর বাহিনীর সহযোগিতায় পাক সেনাদের গণহত্যা চালানোর পেছন থেকে নেতৃত্ব দেন আব্দুল আলীম। 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
#
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat