×
ব্রেকিং নিউজ :
খাগড়াছড়িতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের ঋণ বিতরণ বরগুনায় স্বেচ্ছাসেবকদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষন পিরোজপুরে বিশ্বকবি ও জাতীয় কবির জন্মবার্ষিক উদযাপনে প্রস্তুতি সভা রাঙ্গামাটিতে বজ্রপাতে দুইজন নিহত নাগরিকতা সিভিক এনগেজমেন্ট ফান্ড (সিইএফ)-এর উদ্বোধন হাসপাতাল থেকে বাসায় নেওয়া হয়েছে খালেদা জিয়াকে শনিবার থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান চলবে উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে কাজ করতে মন্ত্রী-এমপিদের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও গাজা,ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাজ্যকে পাশে চায় বাংলাদেশ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অ্যাকশন প্ল্যান প্রস্তুত করতে হবে : স্পিকার
  • প্রকাশিত : ২০১৭-০৪-১২
  • ৯৫৬ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক
জরায়ু ক্যান্সার ও মলাশয় ক্যান্সার এর কারণ ও প্রতিকার
স্বাস্হ্য ডেস্ক:- যেসব নারী জরায়ু ক্যান্সার আক্রান্ত বয়সের ভিত্তিতে তাদের মলাশয়ের ক্যান্সার হওয়ার প্রবল ঝুঁকি রয়েছে।সম্প্রতি এক গবেষণা শেষে এমন উদ্বেগজনক তথ্য দিয়েছেন কানাডার স্বাস্থ্য বিষয়ের গবেষকরা।গবেষণা দলের প্রধান মানিটোবা ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক হারমিন্দার সিংহ বলেন, “ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াইয়ে বেঁচে যাওয়াদের সংখ্যা বাড়ছে। তবে, ক্যান্সার পরবর্তী সময়ে আর কী কী সমস্যার সম্মুক্ষীণ হতে পারে তাও জানা জরুরি,কারণ বিপদ তখনো কেটে যায় না” উল্লেখ্য, নারীদের প্রজননক্ষম অঙ্গে যেসব ক্যান্সার হয় তার মধ্যে জরায়ু ক্যান্সার সাধারণ রোগ।অতীতের তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত ‘দ্য আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি’ শীর্ষক গবেষণাটির ভাষ্য মতে,“২০১৩ সালে আনুমানিক ৫০,০০০ নারী জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হবেন এবং প্রায় ৮,০০০ জন ক্যান্সার আক্রান্ত নারী মারা যাবেন।”

‘জার্নাল অব অঙ্কলজি’তে প্রকাশিত এই নতুন গবেষণাটির জন্য ১৯৮৭ এবং ২০০৮ সালে কানাডার মানিটোবা প্রদেশের ৩১১৫ জন জরায়ু ক্যান্সার আক্রান্ত নারীর তথ্য উপাত্ত ব্যবহার করেন গবেষকরা।গবেষকরা এই রোগীদেরকে কখনো ক্যান্সারে আক্রান্ত হননি এমন ১৫,০৮৪ জন নারীর সঙ্গে তুলনা করেন।সুস্থ নারীদের মেডিকেল রিপোর্ট অনুসারে গবেষকরা ২০০৯ সালে কতোজন নারী মলাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন এ তথ্য খুঁজে পান।দেখা গেছে, জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীদের মধ্যে প্রায় ১ দশমিক ৯ শতাংশ নারীই পরবর্তী সময়ে মলাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। যেখানে সুস্থ নারীদের মধ্য থেকে মাত্র ১ দশমিক ৬ শতাংশ নারী মলাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকেন।এই সমস্ত গবেষণায় দেখা গেছে, জরায়ু ক্যান্সার আক্রান্তদের মধ্য থেকে ৫০ থেকে ৬৫ বছর বয়সী নারীরাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মলাশয় ক্যান্সারে আক্রান্ত হন।আক্রান্তদের মলাশয়ের ডান দিকে ক্যান্সার হবার ঝুঁকিও একটু বেশি বলে জানান গবেষকরা।

জরায়ু-মুখ ক্যান্সার

জরায়ু বা বাচ্চাদানির সবচেয়ে নিচের অংশ হলো জরায়ু মুখ যা প্রসবের পথ বা যোনিতে গিয়ে মিশেছে। জরায়ুর বিভিন্ন অংশের মধ্যে এই অংশে ক্যন্সার এর আশংকা সবচেয়ে বেশি। অতিরিক্ত সাদাস্রাব, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব, অতিরিক্ত অথবা অনিয়মিত রক্তস্রাব, সহবাসের পর রক্তপাত, মাসিক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবার পর পুনরায় রক্তপাত, কোমড়-তলপেট বা উড়ুতে ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গগুলো জরায়ু মুখ ক্যান্সার এর লক্ষণ। অল্পবয়সেই যারা যৌনাচারে অভ্যস্ত হয়ে থাকে তাদের এই ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী। একাধিক পুরুষ সঙ্গী থাকা, বা পুরুষ সঙ্গীটির একাধিক নারী সঙ্গী থাকা কিংবা ঘন ঘন বাচ্চা নেয়া ইত্যাদি কারনেও জরায়ূ মুখ ক্যান্সার হতে পারে। বাল্য বিবাহ হওয়া মেয়েদের এই রোগ হবার সম্ভাবনা বেশী।

হতে প্রায় ১০-১৫ বছর সময় লাগে। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে চিকিৎসার দ্বারা শতকরা ১০০ ভাগ রোগীই ভালো হয়ে যেতে পারে। রোগের শুরুতে উপসর্গ গুলো অল্পমাত্রায় থাকে দেখে একে কেউ গুরুত্ব দিতে চান না। এজন্য রোগীদের পক্ষে অনেক সময়ই প্রাথমিক পর্যায়ে আসা সম্ভব হয়না। দেরীতে আসলে রোগটি ছড়িয়ে পরে তখন জীবন বাঁচাতে বড় ধরনের অপারেশন এবং রেডিওথেরাপীর (Radiotherapy) প্রয়োজন হয় কিন্ত তাতেও পূর্ণ নিরাময় সম্ভব হয়না।

নিয়মিত পরীক্ষা করানোর মাধ্যমে জরায়ু-মুখ ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। এই রোগ থেকে মুক্ত থাকতে যে সকল মহিলার বয়স ৩০ এর বেশী (বাল্য বিবাহ হলে ২৫ এর বেশী) তাদের প্রতি তিন বছর পর পর স্ত্রী রোগ চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য কর্মী দ্বারা জরায়ু মুখ পরীক্ষা করানো উচিত। ভায়া -VIA (Visual Inspection of Cervix with Acetic acid), প্যাপ স্মেয়ার (PAP smear) ইত্যাদি পরীক্ষার মাধ্যমে রোগের প্রাথমিক পর্যায়েই রোগটি সনাক্ত করা সম্ভব।

জরায়ু ক্যান্সার

এ দেশে নারীদের অসুখ-বিসুখ নিয়ে চলে লুকোচুরি খেলা। তাদের শরীরের সমস্যার কথা কেউ জানে না; মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন, এমনকি স্বামীও না। সর্বনাশা অহেতুক এ সংস্কার চলছে যুগের পর যুগ। এক সময় তাকে রোগের কাছে হার মানতে হয়। তখন বাধ্য হয়ে ডাক্তারের কাছে যান চিকিৎসা নিতে। সেখানেও অনেক ঝামেলা। ডাক্তারের কাছে লজ্জা আর সংকোচে রোগের বিস্তারিত বলেন না। ডাক্তারও সঠিক চিকিৎসা দিতে পারেন না। এক পর্যায়ে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। তখন অগত্যা ডাক্তারকে রোগের বিস্তারিত জানান। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। অথচ সঠিক সময়ে রোগের বিস্তারিত জানলে ডাক্তারের যেমন চিকিৎসা করতে সহজ হতো, তেমনি রোগীও বিপদমুক্ত থাকতেন।

বাংলাদেশে জরায়ু মুখের ক্যান্সারের প্রবণতা:এ দেশের মহিলারা কয়েক ধরনের রোগে বেশি আক্রান্ত হন। এর মধ্যে পুষ্টিহীনতা, রক্তস্বল্পতা, জরায়ু মুখে ক্যান্সার এবং ব্রেস্ট ক্যান্সার অন্যতম। ইউটেরাসের বিভিন্ন অংশের মধ্যে জরায়ুর মুখে ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশে মহিলাদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ জরায়ুর মুখে ক্যান্সার। বাংলাদেশে ক্যান্সার আক্রান্ত মহিলাদের মধ্যে শতকরা ৩০ ভাগই হচ্ছেন জরায়ু মুখের ক্যান্সারে শিকার। প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ১২ হাজার মহিলার জরায়ু মুখে নতুনভাবে ক্যান্সার হচ্ছে। যে কারণে ক্যান্সার দেরি করে ধরা পড়ে। ক্যান্সার নিয়ে মানুষের মনে অহেতুক ভয়, সামাজিক কুসংস্কার, পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব, অনেক ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের সুবিধা না থাকা।

জরায়ু ক্যান্সারের কারণ: বাল্যবিবাহ, কম বয়সে ঘন ঘন সন্তান ধারণসহ বহুগামিতা,ধূমপান,দরিদ্র, এইচপিডি সংক্রামণ,এইচএসভি-২ সংক্রামণ,জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ির ব্যবহার, নিরাপদ যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতার অভাব ইত্যাদি কারণে জরায়ু মুখে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ: অতিরিক্ত অথবা অনিয়মিত রক্তস্রাব, দুর্গন্ধযুক্তস্রাব, অতিরিক্ত সাদাস্রাব, মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় রক্তপাত, তলপেটে ও কোমড়ে ব্যথা, সহবাসের সময় রক্তপাত জরায়ুর মুখের ক্যান্সার পূর্ব অবস্থা: এ রোগের চিকিৎসার পরিবর্তে প্রতিরোধ অর্থাৎ রোগটা হতে না দেয়া হলো বুদ্ধিমানের কাজ। যদিও সব রোগের ক্ষেত্রে প্রতিরোধ সম্ভব হয় না। তবে জরায়ু মুখে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। কারণ ডাক্তার অথবা স্বাস্থ্যকর্মী সহজেই জরায়ু মুখ দেখতে এবং পরীক্ষা করতে পারেন। রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগে জরায়ু মুখে অনেক দিন ধরে একটি ক্যান্সার পূর্ব অবস্থা বোঝা যায় অথবা ভবিষ্যতে ক্যান্সারের সম্ভাবনা আছে কিনা তা নির্ণয় করা যায়। ক্যান্সার পূর্ব অবস্থা ধরা পড়লে সামান্য চিকিৎসার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে জরায়ু ফেলে দেয়ার প্রয়োজন হয় না বরং চিকিৎসার পরও সন্তান ধারণ করা সম্ভব।

নির্ণয় ও চিকিৎসা পদ্ধতি: জরায়ু মুখের ক্যান্সার নির্ণয়ের কয়েকটি ধাপ আছে। যেটাকে আমরা বলি ক্লিনিক্যাল স্টেজিং। এটি একটি জটিল পদ্ধতি হলেও খুবই কার্যকর। রোগীকে সম্পূর্ণ অজ্ঞান করে স্টেজিং এবং বায়োপসি করা হয়। রোগীর চিকিৎসা পদ্ধতিও নির্ভর করে স্টেজিংয়ের ওপর। স্টেজিং মূলত ক্যান্সার কতটা ছড়িয়েছে তার ওপর নির্ভর করে।

স্টেজ-১: ক্যান্সার শুধু জরায়ু মুখে সীমাবদ্ধ,

স্টেজ-২: ক্যান্সার জরায়ু মুখের পাশে যোনীপথে কিছুটা ছড়িয়েছে,

স্টেজ-৩: ক্যান্সার যোনীপথের নিচের দিকে অথবা পাশে ছড়িয়েছে,

স্টেজ-৪: ক্যান্সার সামনে মূত্রথলি, পেছনে অন্ত্রথলি অথবা দূরে যেমন ফুসফুস বা মস্তিষ্কে ছড়িয়েছে।

এখানে স্টেজ ১ ও ২-এর প্রাথমিক অবস্থা পর্যন্ত আমরা একটি অপারেশন করতে বলি। যেটা জরায়ুর অনেক বড় একটি অপারেশন। বাকি স্টেজগুলোয় রশ্মি চিকিৎসা (রেডিওথেরাপি) অথবা ক্যান্সার নির্মূল ঔষধ (কেমোথেরাপি) দেয়া যেতে পারে। তবে যে কোনো স্টেজেই রশ্মি চিকিৎসা (রেডিওথেরাপি) করা যায়। যদি রোগী গর্ভবতী থাকাবস্থায় জরায়ু মুখে ক্যান্সার ধরা পড়ে, তখন গর্ভের শিশুর মায়া ত্যাগ করে রোগীকে বাঁচানোর জন্য রশ্মি চিকিৎসা অথবা অপারেশন করা জরুরি হয়। একটা কথা মনে রাখতে হবে, জরায়ু মুখের ক্যান্সারের রোগীকে সারাজীবন তত্ত্বাবধানে রাখা হয়। রোগীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা অথবা ক্যান্সারের পুনরুত্থান ইত্যাদি কারণে রোগীকে নিয়মিত ডাক্তারের নিবিড় তত্ত্বাবধানে রাখা উচিত।

প্রতিরোধের জন্য টিকা

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি বর্তমানে আমাদের দেশেও জরায়ু মুখের ক্যান্সারের টিকা পাওয়া যাচ্ছে। এই টিকা রোগ প্রতিরোধে বেশ কার্যকর।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
#
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat