দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের উপস্থিতিতে ইবাদত-বন্দেগি, জিকির আর আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে মুখর টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমা ময়দান।আজ বাদ ফজর আ’ম বয়ানের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হয়। ইজতেমা মাঠে লাখ লাখ মুসল্লির উপস্থিতিতে চলছে পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোকে বয়ান। আজ দেশের সর্ববৃহৎ জুমার এখানে অনুষ্ঠিত হয়।
বাদ ফজর পাকিস্তানের মাওলানা খোরশেদ আলমের বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ইজতেমার প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা। বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আজ প্রথম দিন। হিমেল হাওয়া আর কনকনে শীত উপেক্ষা করে লাখো মুসল্লি বয়ানে সময় কাটাচ্ছেন। মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ এ ধর্মীয় সমাবেশে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।রোববার দুপুরের আগেই আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ইজতেমার প্রথম পর্ব। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ১৭ জানুয়ারি।ইজতেমায় অংশ নিতে বুধবার থেকেই মুসল্লিরা তুরাগ নদীর তীরে আসতে শুরু করেন। বৃহস্পতিবার দুপুরের আগেই পুরো ইজতেমা ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। অনেক মুসল্লি ময়দানে স্থান না পেয়ে রাস্তার পাশে ফুটপাত এবং বিভিন্ন মসজিদে অবস্থান করছেন। এবারের বিশ্ব ইজতেমায় প্রথম পর্বে স্মরণকালের সবচে বেশি মুসল্লি জমায়েত হয়েছেন বলে ইজতেমা আয়োজকরা জানিয়েছেন।আজ সকাল থেকে মুসল্লিদের ঢল আরও বাড়তে থাকে। ইজতেমায় অংশ নিতে পায়ে হেঁটে, বাস, ট্রাক, ট্রেন, নৌকাসহ বিভিন্ন যানবাহনে হাজারো মুসল্লি ইজতেমা মাঠে সমবেত হচ্ছেন। তারা জামাতবদ্ধ হয়ে দলে দলে ইজতেমা মাঠের নির্ধারিত স্থানে (খিত্তায়) প্রয়োজনীয় মালামাল ও ব্যাগ নিয়ে অবস্থান করছেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে প্রস্তুতিমূলক বয়ান দেয়া হয়। এতে ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের তিন দিন অবস্থানের নিয়ম কানুন সম্পর্কে বয়ান করা হয়।আজ জুমার নামাজে ইমামতি করেন কাকরাইল মসজিদের পেশ ইমাম হাফিজ মাওলানা মুহম্মদ জুবায়ের আহমেদ। রাজধানী ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন উপজেলা এবং আশপাশের জেলা থেকে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি জুমার নামাজে শরিক হন।তাবলিগ জামাতের উদ্যোগে প্রতি বছর বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। মাঠের সব কাজ করা হচ্ছে পরামর্শের মাধ্যমে। এখানে বিদ্যুৎ, পানি, প্যান্ডেল তৈরি, গ্যাস সরবরাহ প্রতিটি কাজই আলাদা আলাদা গ্রুপের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশ থেকেই তাবলিগ জামাতের অনুসারী মুসলমানরা অংশ নেন। তারা এখানে তাবলিগ জামাতের শীর্ষ আলেমদের বয়ান শোনেন এবং ইসলামের দাওয়াতি কাজ বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেয়ার জন্য জামাতবদ্ধ হয়ে বেরিয়ে যান।গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম জানান, বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক কর্মকান্ড সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বিভাগের কাজের সমন্বয় করে থাকে জেলা প্রশাসন।গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন জানান, বিশ্ব ইজতেমার চারপাশ এবং বাহির সিসি টিভির আওতায় আনা হয়েছে। খিত্তায় খিত্তায় পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য সাড়ে আট হাজার পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মী কাজ করবে।
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় এসে বৃহস্পতিবার রাতে আরও দুই মুসল্লি মারা গেছেন। এনিয়ে এবারের বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে আসা তিন মুসল্লি মারা গেছেন।