×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৫-১৯
  • ৫৬২ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক

মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে মৌলভীবাজারের বড়লেখা থানার আব্দুল আজিজ হাবলুসহ তিনজনকে মৃত্যুদন্ডের রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত অন্য দুজন হলেন মো. আব্দুল মতিন ও আব্দুল মান্নান ওরফে মনাই।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল আজ এ রায় দেন।
ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও কে এম হাফিজুল আলম।
এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তিন আসামিকেই মৃত্যুদন্ড দিলো ট্রাইব্যুনাল।
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এটি ৪৫তম রায়। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আব্দুল আজিজ ও আব্দুল মতিন দুই ভাই। আব্দুল মতিন পলাতক রয়েছে।
রায় ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন আসামিপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট আব্দুস সাত্তার পালোয়ান। অন্যদিকে ছিলেন প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি। আরও উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, প্রসিকিউটর রানা দাশ গুপ্ত, ঋষিকেশ সাহা, সুলতান মাহমুদ সীমন। উপস্থিত ছিলেন তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক এম সানাউল হক। এছাড়া গ্রেফতার দুই আসামিকেও আদালতে হাজির করা হয়।
রায় ঘোষণার পর প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি সাংবাদিকদের বলেন, মামলায় তিন আসামিকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এরমধ্যে এক আসামি মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেয়ার পরে দেশে ফিরে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ না করে শান্তি কমিটির পক্ষে কাজ করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে আনা আভিযোগ দালিলিক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যের মাধ্যমে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।
অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান বলেন, রায়ে আমরা ক্ষুব্ধ। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে আসামিরা খালাস পাবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর এ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত শুরু হয়। ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর তদন্তকাজ শেষ হয়। তিন আসামির বিরুদ্ধে একাত্তরে মৌলভীবাজারের বড়লেখা এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনের মতো পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়।
২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ২০১৭ সালের ৩০ মে ফরমাল চার্জ দাখিল করার পরে ২০১৮ সালের ১৫ মে অভিযোগ গঠন (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) করার মধ্যে দিয়ে বিচার শুরু হয়। ওই বছরের ১২ আগস্ট মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তাসহ (আইও) ১৭ জন সাক্ষ্য দেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে এক নম্বর অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৯ মে আসামিরা মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা থানার ঘোলসা গ্রাম থেকে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) নেতা হরেন্দ্র লাল দাস ওরফে হরিদাসসহ মতিলাল দাস, নগেন্দ্র কুমার দাস এবং শ্রীনিবাস দাসকে অপহরণ করেন। তিন দিন বড়লেখা সিও অফিস রাজাকার ক্যাম্পে আটক রেখে নির্যাতনের পর জুরিবাজার বধ্যভূমিতে নিয়ে হরেন্দ্রলাল দাস ওরফে হরিদাসসহ মতিলাল দাস, নগেন্দ্র কুমার দাসকে হত্যা করে। শ্রীনিবাস দাস কোনোক্রমে প্রাণে বেঁচে যান এবং দুই দিন পর বাড়ি ফিরে আসেন।
দুই নম্বর অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের অক্টোবরের শেষ দিকে আসামিরা বড়লেখা থানার বিওসি কেছরিগুল গ্রাম থেকে সাফিয়া খাতুন ও আবদুল খালেককে অপহরণ করে কেরামত নগর টি-গার্ডেন রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে আসামিরা সাফিয়া খাতুনকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে শাহবাজপুর রাজাকার ক্যাম্প ও বড়লেখা সিও অফিসে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়েও সাফিয়া খাতুনকে ধর্ষণ করা হয়। ৬ ডিসেম্বর বড়লেখা হানাদারমুক্ত হলে মুক্তিযোদ্ধারা সাফিয়া খাতুনকে সিও অফিসের বাংকার থেকে উদ্ধার করে।
তিন নম্বর অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৩ নভেম্বর আসামিরা বড়লেখা থানার পাখিয়ালা গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা মঈন কমান্ডারের বাড়িতে হামলা করে বাড়ির মালামাল লুটপাট করে। রাজাকাররা মঈনের বাবা বছির উদ্দিন, নেছার আলী, ভাই আইয়ুব আলী ও ভাতিজা হারিছ আলীকে অপহরণ করে বড়লেখা সিও অফিস রাজাকার ক্যাম্পে আটক রেখে নির্যাতন করে। ৬ ডিসেম্বর বড়লেখা হানাদারমুক্ত হলে তারা মুক্তি পান।
চার নম্বর অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৪ নভেম্বর আসামিরা বড়লেখা থানার হিনাই নগর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা মস্তকিন কমান্ডারের বাড়িতে হামলা করে। মস্তকিনকে না পেয়ে তার ভাই মতছিন আলীকে অপহরণ করে বড়লেখা সিও অফিস রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে তারা। নির্যাতনের ফলে মতছিন আলীর পা ভেঙে যায়। আসামিরা মস্তকিন ও মতছিন আলীর বাড়ির মালামাল লুট করে তিনটি টিনের ঘর পুড়িয়ে দেয়।
পাঁচ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৭ নভেম্বর আসামিরা বড়লেখা থানার ডিমাই বাজার থেকে মুক্তিযোদ্ধা মনির আলীকে আটক করে। তাকে সঙ্গে নিয়ে তার ভাই মুক্তিযোদ্ধা হাবিব কমান্ডারকে আটক করার জন্য বাড়িতে হামলা করে তারা। সেখান থেকে আসামিরা মনির আলী ও তার স্ত্রী আফিয়া বেগমকে অপহরণ করে কেরামত নগর টি-গার্ডেন রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। ক্যাম্পে আসামিরা আফিয়া বেগমকে ধর্ষণ করে। হাবিব কমান্ডার ও মনির আলীর বাড়ির মালামালও লুটপাট করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
#
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat