×
ব্রেকিং নিউজ :
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ দিতে হবে : ডেপুটি স্পীকার স্কুল-মাদ্রাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের ভোট কেন্দ্রে থাকবে সর্বোচ্চ সংখ্যক পুলিশ-আনসার, প্রতি ইউনিয়নে ম্যাজিস্ট্রেট ভূমি খাতে রাজস্ব বাড়ানোর ক্ষেত্র চিহ্নিত করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ ভূমিমন্ত্রীর বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা ব্যাপক : এডিবি আবাসিক প্রধান উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে ইতিহাসে শেখ হাসিনার নাম লেখা থাকবে : ধর্মমন্ত্রী অসংক্রামক রোগের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবী বাংলাদেশ থেকে আম নিতে আগ্রহী চীন : কৃষিমন্ত্রী ঝালকাঠিতে শুরু হয়েছে ৪৫তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ বিএনপি দিন দিন সাংগঠনিকভাবে আরও দুর্বল হচ্ছে : ওবায়দুল কাদের
  • প্রকাশিত : ২০২১-১১-১৫
  • ৬৪৫ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক

আজ ১৫ নভেম্বর বরগুনাসহ উপকূলবাসীর বেদনাময় স্মৃতির দিন । ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর, ঘড়ির কাটায় তখন রাত ৭ টা ৪০ মিনিট। মহাবিপদ সংকেতের কথা শুনে আতঙ্কিত বরগুনা উপকূলের মানুষ। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির সাথে দমকা হাওয়া বইছে। সচেতন মানুষগুলো যেতে শুরু করলেন আশ্রয় কেন্দ্রে। বেশীর ভাগ মানুষই রয়ে গেলেন বাড়িতে। তাদের ধারনা ছিল, কত ঝড়ই আইলো গেলো-এবারেও তাদের কিছু হবেনা। সিডর আঘাত হানতে শুরু করেছে উপকূলীয় এলাকায়। মানুষের ঘর যেন এখনই উড়িয়ে নিয়ে যাবে। তার সাথে যুক্ত হলো পানি প্রবাহ। রাত সাড়ে ১০ টার দিকে বঙ্গোপসাগরের সব জল জম দূতের মতো এসে মানুষগুলোকে নাকানি-চুবানী দিয়ে কেড়ে নিতে শুরু করলো। মাত্র ১০ মিনিটের জলোচ্ছ্বাসে উপকূলের কয়েক হাজার মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। পুরো এলাকা হয়ে গেলো লন্ডভন্ড। চারিদিকে ধ্বংসলীলা। লাশের পর লাশ পাওয়া যাচ্ছে। কবর দেবার জায়গা পাওয়া যাচ্ছেনা। এক একটি কবরে ২/৩ জনের লাশ ফেলে মাটি চাপা দেয়া হলো। সিডরের এতো বছর পরেও নিহতের সঠিক সংখ্যা পাওয়া যায়নি।
২০০৭ সালের এ দিনে ঘূর্ণিঝড় সিডর উপকূলীয় অঞ্চলকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল। কেড়ে নিয়েছে কয়েক হাজার মানুষের প্রাণ। সেদিনের সেই দু:সহ স্মৃতি আজো উপকূলবাসীকে মনে করিয়ে দেয়। অনেক পরিবারের কান্না এখনও থামেনি।
সরকারী তথ্য অনুযায়ী সিডরের আঘাতে বরগুনা জেলার ১ হাজার ৩৪৫ জন মানুষ মারা গেছে। নিখোঁজ রয়েছে আরো ১৫৬ জন। ৩০ হাজার ৪৯৯ টি গবাদি পশু ও ৬ লাখ ৫৮ হাজার ২৫৯ টি হাস-মুরগী মারা যায়। জেলার ২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬১ টি পরিবারের সবাই কমবেশী ক্ষতির শিকার হন। স¤পূর্ণভাবে গৃহহীন হয় জেলার ৭৭ হাজার ৭৫৪ টি পরিবার। বেসরকারী হিসেবে নিহতের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার।
সিডরে এতো মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, আবহাওয়া অফিস ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত থেকে হঠাৎ করে ১০ নম্বর বিপদ সংকেতের কথা ঘোষণা করে। মংলা সমুদ্র বন্দরকে কেন্দ্র করে যে সতর্ক সংকেত প্রচার করা হয়েছিল, তা বোঝার উপায় বরগুনার মানুষের ছিলনা। রেডক্রিসেন্টের দু-এক জায়গায় তারা মাইকিং করলেও বেশীর ভাগ জায়গায়ই কোন রকম সংকেত প্রচার করা হয়নি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তথ্য অফিস মাইকিং করলেও তা ছিল শহর এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। যারাও ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত শুনেছেন, তারাও পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্রের অভাবে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারেননি।
স্থানীয় সংস্থা জাগো নারীর প্রধান নির্বাহী হোসনেয়ারা হাসি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সতর্ক সংকেত স্থানীয় ভাষায় বোধগম্য করে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। সিপিপির টিম লিডার জাকির হোসেন মিরাজ বলেন, ঘূর্ণিঝড় কর্মসূচির সেচ্ছাসেবকসহ বিভিন্ন বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সাংবাদিক হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, উপকূলীয় এলাকায় আরো আরও কমিউনিটি রেডিও স্টেশন করতে হবে। সাংবাদিক স্বপন দাস বলেন, মোবাইলের টাকা শেষ হলে রিসার্চ করার জন্য বলা হয়, সেরকম করে বিভিন্ন বিপদে-আপদে মোবাইলে জানানো যেতে পারে।
বরগুনা সদর উপজেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার নাম নলটোনা। যেখানে সিডরের এক বছর আগে থেকেই বেড়িবাঁধ ছিলনা। সিডরের সময় সেখানে ২০ ফুটের মতো পানি বৃদ্ধি পেয়েছিল। ঘূর্ণিঝড়ের পরের দিনই সেখানে অর্ধ শতাধিক মানুষের লাশ পাওয়া যায়। তখনও এলাকাটি পানির নিচে হাবুডুবু খাচ্ছিল। লাশ দাফনের জন্য কোন স্থান খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলনা। লাশগুলো নিয়ে আসা হয় বরগুনা-নিশানবাড়িয়া সড়কের পাশে পশ্চিম গর্জনবুনিয়া গ্রামে। দাফনের কাপড় ছাড়াই ২৯ জনকে ১৯ টি কবরে মাটি চাপা দেয়া হয়। জায়গার অভাবে ৪ টি কবরে ৩ জন করে ১২ জন, ৩ টি কবরে ২ জন করে ৬ জন ও ১২ টি কবরে ১ জন করে ১২ জনের লাশ দাফন করা হয়।
কবরগুলোকে একটু উচু করে রাখা হয়েছে। বরগুনা প্রেসক্লাবের সহযোগিতায় স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা সংগ্রাম প্রাথমিকভাবে ইট দিয়ে কবর স্থানটি ঘিরে দিয়েছিলো। বর্তমান জেলা ও উপজেলা প্রশাসন বরগুনা প্রেসক্লাবের সহযোগিতায় সেখানে সিডর স্মৃতিস্তম্ভ তৈরী করেছে। সারিবদ্ধ কবর দেখে মানুষ এসে থমকে দাড়ায়। কেউ কেউ কান্না চেপে রাখতে পারেননা। সিডরের স্মৃতি হয়ে আছে কবরগুলো। কবরগুলোতে শুয়ে আছেন, নলটোনা গ্রামের তাসলিমার বাবা আবদুর রশিদ (৫৫), মা আম্বিয়া খাতুন (৫০), ছেলে আল আমিন (৭), ফোরকানের বাবা দিন আলী (৬৫), হাসি বেগমের মেয়ে শাহিনুর (৪), শাহজাহানের মা তারাভানু (৬০), মেয়ে খাদিজা আক্তার (৩), আনিসের স্ত্রী খাদিজা বেগম (৩০), ছেলে আবু বকর (৩), রফেজ উদ্দিনের স্ত্রী বিউটি বেগম (৩৫), মাসুমের মা হেলেনা আক্তার (৩০), বাদলের মা লালবরু (৬৭), বাবুলের মেয়ে জাকিয়া আক্তার (৮), আবদুস সত্তারের স্ত্রী সাফিয়া খাতুন (৩০), ছেলে রেজাউল (১২), রেজবুল (৭), মেয়ে সাবিনা (৯), সগির হোসেনের মেয়ে সোনিয়া আক্তার (৩), আবদুর রবের ছেলে হোসেন আলী (১২), মেয়ে ময়না (৭), হোসনেয়ারা (৫), শাশুড়ী মনোয়ারা বেগম (৫০), সরোয়ারের স্ত্রী জাকিয়া আক্তার (৩০), মেয়ে রোজিনা (৪), ছত্তারের স্ত্রী বেগম (৫০), পুত্রবধু নাজমা আক্তার (৩০), নাতি পারভেজ (৪), নাসির উদ্দিনের স্ত্রী হোসনেয়ারা (২৬) ও গর্জনবুনিয়া গ্রামের গনি বিশ্বাসের ছেলে জাহিদ হোসেন (৫)।
সিডরে বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ আজও মেরামত হয়নি। সামান্য জোয়ারের পানি বাড়লেই নি¤œাঞ্চল তলিয়ে যায়। নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে উপকূলের মানুষ। বরগুনা পানি উন্নয়নের বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কাইসার আলম জানান, সিডরের পরে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য সিআইপি’র মাধ্যমে দুটো প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। যার কাজ এখনো চলছে। এছাড়া আরও ৮টি প্রকল্পের মাধ্যমে মেরামতের কাজ চলছে। তবে আর্থিক সংকটের কারণে অনেক সংস্কার কাজই করা সম্ভব হচ্ছেনা।
উপকূলীয় বরগুনায় পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টারও নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কাম সাইক্লোন শেল্টারসহ বরগুনায় ৫০০ এর মতো আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। যেখানে দুর্যোগের সময় সর্বোচ্চ ২ লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারে। যা ১০ লক্ষাধিক মানুষের জন্য পর্যাপ্ত নয়। ঘূর্ণিঝড়ের সময় সাইক্লোন শেল্টারের অভাবে বেশীর ভাগ মানুষই নিরাপদ আশ্রয় নিতে পারেনা, যার ফলে উপকূলের আশ্রয়হীন মানুষকে প্রাণ হারাতে হয়।
বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান জানান, আরও সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
স্মৃতিতে সিডরকে স্মরণ করার জন্য বরগুনা জেলা প্রশাসন ও প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে গর্জনবুনিয়া গণকবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করে কবর জিয়ারত, নিহতদের স্মরণে দোয়ানুষ্ঠান, সবশেষে স্মরণসভার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
#
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat