×
ব্রেকিং নিউজ :
তেহরানের ২টি বিমানবন্দরে আবারো ফ্লাইট চালু জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস-এর মৃত্যুতে ওবায়দুল কাদেরের শোক প্রধানমন্ত্রী ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন: অর্থমন্ত্রী রাঙ্গামাটিতে কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাশের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক পরলোকে জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার শিব নারায়ন দাশ জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের সদস্য পদের বিরুদ্ধে মার্কিন ভেটোর নিন্দা হামাসের চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন ভোটগ্রহণ শুরু দেশের উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ৬৪ জেলার স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৫-০১
  • ৯০৭ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক

সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিলেটে মা-বাবার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ভাষা সৈনিক ও সাবেক অর্থমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত।
রোববার বেলা সোয়া ২টায় সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে তার জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় সিলেটের সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন। জানাজার নামাজে ইমামতি করেন, সিলেটের প্রবীণ মুহাদ্দিস, দরগাহ হযরত শাহজালাল (রহ.) মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মুহিবুল হক গাছবাড়ি।
পরে, তাঁকে পৈত্রিক নিবাস নগরের রায়নগরস্থ ডেপুটি বাড়ি সংলগ্ন পারিবারিক গোরস্থানে সমাহিত করা হয়। এখানেই শায়িত আছেন মুহিতের বাবা অ্যাডভোকেট আবু আহমদ আব্দুল হাফিজ এবং মা সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরী।
এর আগে দুপুর ১২টায় সর্বজনশ্রদ্ধেয় আবুল মাল আবদুল মুহিতের মরদেহ সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হয়। প্রথমে সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) সুসজ্জিত দল কর্তৃক তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। পরে, সেখানে সিলেটের রাজনৈতিক-পেশাজীবী-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে সর্বস্তরের মানুষ তাকে শেষবারের মতো ফুলেল শ্রদ্ধা জানান।
বাদ জোহর জানাযায় অংশ নিতে সিলেট আলিয়া মাঠ লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে। জানাযার পূর্বে তাঁর স্মৃতিচারণ করে বক্তৃতায় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘তিনি ছিলেন আমার বড় ভাই, আমার নেতা। আমার কাজের প্রধান তদারককারী ছিলেন। আমি তার নেতৃত্বে কাজ করেছি। তিনি আদর্শ ব্যক্তি ছিলেন। ছিলেন সৎ, নির্লোভ ও আঞ্চলিকতার উর্ধ্বে। সংস্কৃতি, সাহিত্য, ক্রীড়া সবক্ষেত্রেই তাঁর বিচরণ ছিল। তিনি আমাদের প্রজন্মের আদর্শ।’
বন ও পরিবেশ মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘মুহিত ভাইয়ের মৃত্যুতে আমরা অভিভাবক হারালাম। দেশের মানুষ একজন অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ হারাল। এ শূণ্যতা পূরণ হওয়া কঠিন।’
মৌলভীবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ও সাবেক চিফ হুইপ আব্দুস শহিদ বলেন, ‘তিনি আমাদের গর্ব, আমাদের অভিভাবক ও আদর্শ। তার নেতৃত্বে আমরা সিলেট ও বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজ করেছি। দেশ তার এক রতœকে হারাল।’
সিলেট-৬ আসনের সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদার বলেন, ‘আমাদের প্রিয় মুহিত ভাই। তিনি আমার দুই বছরের সিনিয়র। আমরা একসঙ্গে এমসি কলেজে পড়তাম। তিনি সফল জীবন যাপন করে গেছেন। জীবন নিয়ে তিনি তৃপ্ত ছিলেন।’
সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান এমপি, তিনি যেখানে হাত দিয়েছেন, সেখানে সোনা ফলেছে। তিনি বাংলাদেশের উজ্জল নক্ষত্র ছিলেন।’
সুনামগঞ্জ-৩ আসনের এমপি মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, ‘আবুল মাল মুহিত সিলেটের ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ। তিনি ছিলেন জ্ঞানের বাতিঘর। দেশের উন্নতি করার চেষ্টা ছিল তার মাঝে। তাকে হারিয়ে আমরা শোকাহত।’
হবিগঞ্জের এমপি আব্দুল মজিদ খান বলেন, ‘মুহিত ভাইয়ের মৃত্যু কোনো সাধারণ মৃত্যু নয়, একজন কীর্তিমান মহাপুরুষের মহাপ্রয়াণ। তার আদর্শ আমরা অনুসরণ করব।’
জানাজার আগে পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন, আবুল মাল আবদুল মুহিতের অনুজ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। ভাইয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ভাই কারো মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে তাকে আপনারা ক্ষমা করে দেবেন। তার কোনো দেনা থাকলে আমি পরিশোধ করব।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা যেন উনার মতো সততার সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে জনগণের মঙ্গলে কাজ করতে পারি- সবাই এই দোয়া করবেন।’
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের পরিচালনায় এ সময় অন্যান্যের মাঝে আরও বক্তব্য দেন- সিলেট-৩ আসনের হাবিবুর রহমান হাবিব, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সহসভাপতি ও সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন।
জানাযায় সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো. মোশরাররফ হোসেন, ডিআইজি মফিজুর রহমান, সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ, জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান, পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন আহমদসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেন।
জানাজার পর মুহিতের মরদেহ নগরের রায়নগরে পারিবারিক কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার বাবা প্রয়াত অ্যাডভোকেট আবু আহমদ আব্দুল হাফিজ এবং মা সৈয়দ শাহার বানু চৌধুরীর কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
এর আগে, শনিবার (৩০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে মুহিতের মরদেহ বহনকারী ফ্রিজার ভ্যান সিলেটের পথে রওয়ানা হয়ে রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে নগরের হাফিজ কমপ্লেক্সে পৌঁছায়। সেখানে মরদেহ গ্রহণ করেন সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, ভাষাসৈনিক, সাবেক অর্থমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় সাবেক অর্থমন্ত্রী বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। মাঝে তাকে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল মাল আবদুল মুহিত ১২টি বাজেট উপস্থাপন করেছেন। তিনি ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন।
আবুল মাল আবদুল মুহিতের মৃত্যুতে তার জন্মস্থান ও নির্বাচনী এলাকা সিলেটে দলমত নির্বিশেষে সবার মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
#
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat