পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, পরিবেশ সংরক্ষণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দেশে ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ দেশের বৃক্ষাচ্ছাদিত মোট ভূমি ২২ দশমিক ৩৭ শতাংশ হতে ২৫ শতাংশে এবং বনভূমির পরিমাণ ১৪ দশমিক ১ শতাংশ হতে ১৬ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
সরকার বনায়ন ও বন সংরক্ষণ, অবক্ষয়িত বন পুনরুদ্ধার এবং টেকসই বন ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, বন সম্প্রসারণ এবং বন উজাড় ও অবক্ষয় রোধে ২০০৯-২০১০ হতে ২০২১-২২ আর্থিক সাল পর্যন্ত মোট ১ লক্ষ ৯৩ হাজার ৪৫৩ হেক্টর ব্লক এবং ২৮ হাজার ৫৫১ সিডলিং কি.মি.স্ট্রিপ বাগান সৃজন এবং ১০ কোটি ৮৬ লক্ষ চারা বিতরণ ও রোপণ করা হয়েছে।
শাহাব উদ্দিন আজ সচিবালয়ের তথ্য অধিদপ্তরের সভাকক্ষে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা ২০২৩ এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা ২০২৩ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এ কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে শাহাব উদ্দিন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে নানা সরকারী কর্মসূচীর কথা তুলে ধরেন।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির ঘোষণা মোতাবেক ‘প্লাস্টিক দূষণ সমাধানে সামিল হই সকলে’ প্রতিপাদ্যে এবং ‘সবাই মিলে করি পণ, বন্ধ হবে প্লাস্টিক দূষণ’ শ্লোগানে এবার বাংলাদেশে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হবে।
তিনি বলেন, আগামীকাল ৫ জুন সকাল সাড়ে নয়টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন করবেন।
তিনি বলেন, রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিবেশ মেলা আগামী ৫ জুন থেকে ১১ জুন পর্যন্ত চলবে । ২৭ জুন থেকে ৩০ জুন ঈদ উল আযহার সরকারি ছুটি থাকায় বৃক্ষমেলা চলবে ৫ থেকে ২৬ জুন এবং ১ জুলাই থেকে ১২ জুলাই ২০২৩ পর্যন্ত। প্রতিদিন মেলা চলবে সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৮ টা পর্যন্ত।
পরিবেশমন্ত্রী জানান, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ৫ জুন সকাল ১১ টায় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহ্মুদ।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু এওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন ২০২২, জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২২, বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার ২০২১ এবং সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের মধ্যে লভ্যাংশের চেক বিতরণ করা হবে।
শাহাব উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার সহ অন্যান্য গণমাধ্যমে পরিবেশ দিবসের তাৎপর্য ভিত্তিক অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় সংবাদপত্রে ক্রোড়পত্র এবং পরিবেশ অধিদপ্তর হতে স্মরণিকা ও বুকলেট প্রকাশ করা হবে।
তিনি বলেন, দেশের সকল জেলা ও উপজেলায় এবং ঢাকা মহানগরীর ১০০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদ্যাপন করা হবে। শিশু চিত্রাঙ্কন, বিতর্ক ও স্লোগান প্রতিযোগিতা, পরিবেশ বিষয়ক সেমিনার এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের জন্য সচেতনতামূলক সেমিনার আয়োজন করা হবে।
তিনি বলেন, এছাড়াও রোপণ করা বৃক্ষের যতœ বৃদ্ধির জন্য এবারের জাতীয় বৃক্ষমেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘গাছ লাগিয়ে যতœ করি, সুস্থ প্রজন্মের দেশ গড়ি’। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও জাতীয়, বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বৃক্ষমেলার আয়োজনে করা হবে।
বনমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৃক্ষের চারা বিতরণ করা হবে। মোবাইল ফোন অপারেটরদের মাধ্যমে খুদে বার্তা প্রেরণ করা হবে।
পরিবেশ মন্ত্রী জানান, প্লাস্টিক দূষণ রোধে দশ বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধে তিন বছর মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, নিষিদ্ধ পলিথিন শপিং ব্যাগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অংশ হিসেবে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৩ হাজার ৬৯২টি মামলা দায়ের, ৫ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায়, ১ হাজার ৭৬৩ টন পলিথিন জব্দ এবং ১৬৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, এছাড়াও, সুন্দরবন সহ অন্যান্য বনভূমিতে যাতে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক দিয়ে কোনো দূষণ না হয় সে বিষয়েও নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, সুষ্ঠুভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ প্রণয়ন করা হয়েছে।