মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কোনো বন্দী মানসিকভাবে অক্ষম কি না—এই প্রশ্নে আইকিউ পরীক্ষার ভূমিকা কী, তা নিয়ে বুধবার গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় বসে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট।
দুই দশকের বেশি সময় আগে শীর্ষ আদালত মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করাকে বেআইনি ঘোষণা করে, এটিকে অষ্টম সংশোধনীতে নিষ্ঠুর ও অস্বাভাবিক শাস্তির ওপর নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন বলে রায় দেয়। তবে কে মানসিকভাবে অক্ষম, তার সংজ্ঞা নির্ধারণের ক্ষমতা রাখা হয় অঙ্গরাজ্যগুলোর হাতে। ওয়াশিংটন থেকে বার্তাসংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
এবারের শুনানির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে আইকিউ পরীক্ষার ফলাফলের গুরুত্ব ও সীমা।
আলাবামা অঙ্গরাজ্যে ১৯৯৭ সালের এক হত্যাকাণ্ডে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৫৫ বছর বয়সী জোসেফ স্মিথ দাবি করেছেন—তিনি মানসিকভাবে অক্ষম, তাই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যাবে না। গত কয়েক বছরে নেওয়া পাঁচটি আইকিউ পরীক্ষায় তার স্কোর এসেছে ৭২ থেকে ৭৮-এর মধ্যে। আলাবামা আইনে ৭০ বা তার নিচে স্কোরকে মানসিক অক্ষমতার প্রমাণ হিসেবে ধরা হয়।
স্কোর ৭০-এর ওপরে হলেও একটি জেলা আদালত পরীক্ষার সম্ভাব্য ত্রুটি ও অতিরিক্ত তথ্য বিবেচনায় স্মিথকে মানসিকভাবে অক্ষম ঘোষণা করে। আপিল আদালতও সেই রায় বহাল রাখে। এরপর আলাবামা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে।
আলাবামার আইনজীবী রবার্ট ওভারিং আদালতে বলেন, ‘একাধিক আইকিউ স্কোর বিশ্লেষণের যেসব পদ্ধতি রয়েছে, সবই দেখায় স্মিথ মানসিকভাবে অক্ষম নন।’
লিবারেল বিচারপতি কেতানজি ব্রাউন জ্যাকসন প্রশ্ন তোলেন, কেন মানসিক অক্ষমতা নির্ধারণের মানদণ্ড শুধুমাত্র ৭০ স্কোরেই সীমাবদ্ধ থাকবে?
ওভারিং বলেন, ‘আইকিউ দিয়েই প্রথম মানসিক অক্ষমতা নির্ধারণ শুরু হয়, এবং এটাই এখনো প্রধান মানদণ্ড। অঙ্গরাজ্যগুলো সেরা প্রমাণ হিসেবে আইকিউ স্কোরকে গ্রহণ করতে পারে।
জ্যাকসন আপত্তি জানিয়ে বলেন, আদালতের আগের কোনো রায়ে ‘৭০-এর নিচে আইকিউ স্কোর’—এমন নির্দিষ্ট শব্দ নেই। তিনি বলেন, ‘আপনারা পুরো বিষয়টিকে এমনভাবে আইকিউ পরীক্ষার ওপর দাঁড় করিয়েছেন, যা আমাদের আগের রায়ের সঙ্গে যায় না।’
রক্ষণশীল বিচারপতি স্যামুয়েল আলিটো বলেন, একটি ‘সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড’ থাকলে সুবিধা হয়—যাতে প্রতিটি মামলায় নতুন করে বিশেষজ্ঞ ডাকার প্রয়োজন না পড়ে।
স্মিথের আইনজীবী সেথ ওয়াক্সম্যান যুক্তি দেন যে, মানসিক সক্ষমতা নির্ধারণে শুধু আইকিউ স্কোরই চূড়ান্ত নির্দেশক হতে পারে না। স্বল্পমাত্রার মানসিক সক্ষমতা একটি অবস্থা—এটি কেবল একটি সংখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
সুপ্রিম কোর্ট আগামী জুনের মধ্যে এ বিষয়ে রায় দিতে পারে।