×
ব্রেকিং নিউজ :
  • প্রকাশিত : ২০২২-১০-২৭
  • ৫০২ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক

বাগেরহাটের চাঞ্চল্যকর মনু বেগম হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক আসামি কবিরাজ মো. হেমায়েত ওরফে জাহিদ (৫২)কে ১৭ বছর পর কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।
জাহিদ কবিরাজ পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর থানার মো. সামসুল হক খানের পুত্র বলে জানা গেছে।
বুধবার দিবাগত রাতে র‌্যাব-৩ এর একটি দল রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। এসময় তার কাছ থেকে কবিরাজি চিকিৎসায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের ১২৯টি আংটি, বক্স-১টি, ৩টি শঙ্খ, আলাদিনের চেরাগ-১টি, ক্রেস্ট-২টি, কবিরাজি সংক্রান্ত বই-১৫টি, পিতলের পাঞ্জা-১টি ও কবিরাজি সংক্রান্ত অন্যান্য সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারস্থ র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার মূখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান বলেন, ২০০৫ সালের অক্টোবর মাসে বাগেরহাট জেলার সদর এলাকায় মনু বেগম নামে এক নারীর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়। এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় হেমায়েতসহ ৫ জনকে আসামি করে ভুক্ত ভোগীর বোন বাদি হয়ে বাগেরহাট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধারের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। পরে মামলার অন্যতম আসামি হেমায়েত ওরফে জাহিদ কবিরাজ পলিয়ে অত্মগোপনে থাকে। মামলাটির তদন্ত শেষে সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে ২০০৯ সালের জুন মাসে আদালত আসামি হেমায়েতকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন।
র‌্যাব বলছে, ২০০৩ সালে সে তার স্ত্রী সন্তানসহ পিরোজপুর থেকে বাগেরহাটে এসে কবিরাজি ব্যবসা শুরু করে। কবিরাজি পেশায় তার অন্যতম সহযোগি ছিল এ হত্যা মামলার অপর মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি সোবহান। সে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের তাবিজ, স্বামী-স্ত্রীর কলহ দূরীকরণ তাবিজ, বশীকরণ তাবিজ ইত্যাদির মাধ্যমে সাধারন মানুষের কাছ থেকে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নিত। মূলত সে নারীদের টার্গেট করে জ্বীনের বাদশার মাধ্যমে নারীদের বিভিন্ন শারীরিক, মানসিক, আর্থিক ও পারিবারিক সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে দীর্ঘদিন যাবৎ কবিরাজি ব্যবসা চালিয়ে আসছিল।
খন্দকার আল মঈন জানান, ২০০৫ সালে জানুয়ারি মাসে সোবহান ভিকটিম মনুকে মাথা ব্যাথার রোগকে মানসিক রোগ বলে আখ্যায়িত করে কবিরাজি চিকিৎসার জন্য হেমায়েতের কাছে নিয়ে আসে। ভিকটিম মনুর স্বামী ঢাকায় চাকুরি করত এবং প্রতিমাসে সংসারের খরচ চালানোর জন্য মনুর কাছে টাকা পাঠাত। মনু তার জমানো টাকা দিয়ে কাপড়ের ব্যবসা করত এবং নারী উদ্যোক্তা হয়ে উঠেন। কাপড়ের ব্যবসা করে এবং স্বামীর পাঠানো টাকা জমিয়ে মনুর কাছে লক্ষাধিক টাকা জমা হয়। পরবর্তীতে এই টাকার প্রতি হেমায়েতের লোভ হয়, এ জন্য সে মনুর সরলতার সুযোগে তার টাকা পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে মনুকে টার্গেট করে। সুযোগ বুঝে রাতের অন্ধকারে মনুর গলাকাটা লাশ বস্তাবন্দি করে হেমায়েতের বাড়ির সামনের খালের অপর পার্শ্বে ধান ক্ষেতে লুকিয়ে রাখে। এই হত্যাকান্ডের পর বাগেরহাট সদর থানায় হত্যা মামলা দায়েরের খবর পেয়ে সে বাগেরহাট থেকে পালিয়ে যশোরে একটি মাজারে গিয়ে আশ্রয় নেয়। পরবর্তী দিন অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে আজমীর শরীফ মাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে। এরপর সে বিভিন্ন ধরণের প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ৩ বছর অবস্থান করে। ২০০৮ সালে পুনরায় অবৈধ পথে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে ফিরে এসে ঢাকার মিরপুরে বসবাস শুরু করে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত দু’মাসের মধ্যে মনু হত্যা মামলার আসামি কবিরাজ হেমায়েত কিছুদিন পর পর পিরোজপুর, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর, কেরানীগঞ্জ এবং মিরপুরে তার অবস্থান পরিবর্তন করেছে। তার পরিচয় গোপন রাখার জন্য সে মাঝে মাঝেই তার চুল দাঁড়ি রং পরিবর্তন, পোশাকের ধরন পরিবর্তন করে আসছিল।
এছাড়াও ২০১২ সালে দারুস সালাম থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে প্রতারক কবিরাজ হেমায়েতের বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে। ২০১৭ সালে সে তার কবিরাজি কাজে ব্যবহৃত কষ্টি পাথরের মূর্তি রাখার দায়ে চোরাকারবারী হিসেবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়ে দেড়মাস জেল খাটে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
#
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat