×
ব্রেকিং নিউজ :
দেশের উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ৬৪ জেলার স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি উল্লাপাড়ায় জামাত নেতার সাথে ছবি ভাইরালের ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন দিনাজপুরে নাশকতার মামলায় বিএনপি-জামায়াতের ৩০ নেতাকর্মী জেলহাজতে কুমিল্লায় প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধন রাঙ্গামাটিতে প্রাণি সম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধন স্কাউটিংয়ের মূল দর্শন, কর্মসূচি ও কার্যক্রমগুলোতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের আহবান শিক্ষামন্ত্রীর বার কাউন্সিল এনরোলমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ আশফাকুল ইসলাম বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদপত্র বিতরণ প্রাণি ও মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
  • প্রকাশিত : ২০২৩-০৩-২৫
  • ৫৩০ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক

সড়ক দুর্ঘটনার পর প্রায়ই অতিরিক্ত গতি আর চালকের ঘুমিয়ে পড়ার যে সমস্যার বিষয়টি সামনে আসে, সেটি রুখতে একটি অ্যাপ বানিয়েছে বাংলাদেশের একটি স্টার্টআপ।

কয়েক বছর ধরে বেশ পরিচিত এ স্টার্টআপের নাম ‘যান্ত্রিক’। এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও উদ্যোক্তা আল-ফারুক শুভ দাবি করছেন, তাদের উদ্ভাবনটি ব্যবহার করলে অতিরিক্ত গতির সমস্যা অনেকটাই সমাধান করা যাবে। চালকের ঘুমজনিত সমস্যা দেখা দিলেও সংকেত পাবেন চালক ও গাড়ির মালিক।

গাড়ির পাশাপাশি মোটরসাইকেলের জন্যও আছে একই ধরনের অ্যাপ, যেটি সামনে কোনো গর্ত বা স্পিডব্রেকার আছে কি না, সে বিষয়েও চালককে সংকেত গিয়ে সাবধান করে দেবে।

এ অ্যাপ ব্যবহার করতে বাড়তি কোনো যন্ত্র কিনতে হয় না। সাধারণ স্মার্টফোন থাকলেই হবে বলে জানালেন এর উদ্যোক্তা।

অ্যাপটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডিজিটাল ড্রাইভার’, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে।

এটি গাড়ির গতি, এক্সিলারেশন, ব্রেক, ড্রাইভিং প্যাটার্ন, ঘুম, ঝাঁকুনি ইত্যাদির তথ্য নিয়ে চালকের ‘পারফরম্যান্স স্কোর’ তৈরি করে। ফলে কারা ভালো গাড়ি চালান এবং কারা চালান না, সহজেই তা বোঝা যায়। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যায় আগে থেকেই।
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা বরাবরই আলোচিত একটি বিষয়। গাড়ির অতিরিক্ত গতি আর চালকের ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি চালানো, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে তার চোখ বুজে আসার বিষয়টি প্রায়ই সামনে আসে।

গত ১৯ মার্চ মাদারীপুরের শিবচরে বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে ১৯ জনের মৃত্যুর পরও অতিরিক্ত গতি ও চালকের ঘুমিয়ে পড়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য বলছে, ২০২২ সালে দেশে ৬ হাজার ৭৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ হাজার ৯৫১ জনের প্রাণ ঝরে গেছে। এই সংখ্যা গত আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

সমিতির পর্যবেক্ষণ বলছে, বেপরোয়া গতি, বিপদজনক ওভারটেকিং, রাস্তাঘাটের নির্মাণ ত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধে চলাচল, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চালকের বেপরোয়া মনোভাব অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার কারণ।

কীভাবে কাজ করে : শুভ জানান, গাড়ি চলা শুরু করলে ‘ডিজিটাল ড্রাইভার’ স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যায়। গাড়ি চলা বন্ধ হলে নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে যায়। এটি জিপিএস টেকনোলজির উপর ভিত্তি করে কাজ করে।

গাড়ি চলা শুরু করার পর এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে চালকের চোখ ও মুখের ওপর সারাক্ষণ নজর রাখে। চোখ বন্ধ হলেই উচ্চ শব্দে অ্যালার্ম বাজায়। ফলে চালক ঘুমাতে পারেন না। আর গাড়িতে থাকা অন্য আরোহীরাও তা বুঝতে পারেন।

গাড়ির মালিক যে গতি নির্দিষ্ট করে দেবেন, গাড়ি সেই গতি ছাড়িয়ে গেলে একইভাবে অ্যালার্ম বাজতে থাকে অ্যাপ, যতক্ষণ না গতি কমানো হয়।

গাড়িতে না থেকেও মালিক তার মোবাইলে অ্যাপ নোটিফিকেশন পাবেন যে চালক বেশি গতিতে গাড়ি চালাচ্ছেন। একেক সড়কের জন্য একেক গতিসীমাও বেঁধে দেওয়া সম্ভব এই অ্যাপে।
এই অ্যাপ তার চালককে সড়কের অবস্থা সম্পর্কেও ধারণা দেয়। গাড়ি চলার সময় ঝাঁকুনির উপর ভিত্তি করে এটি কোথায় স্পিড ব্রেকার বা গর্ত আছে সেটিও শনাক্ত করে। একবার শনাক্ত হলে তা তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষণ করে রাখে। পরে অন্য কোনো গাড়ি এই স্পিড ব্রেকার বা গর্তের কাছে এলেই আগে থেকে সংকেত দেয়। স্বয়ংক্রিয় কণ্ঠে বলতে থাকে, ‘৩০০ মিটার সামনে স্পিড ব্রেকার’ বা ‘গর্ত আছে, সাবধানে চালান’।

শুভ বলেন, “দুর্ঘটনা কমানোর পাশাপাশি এই সিস্টেম ব্যবহার করে চালকদের ‘রিয়েল টাইম পারফম্যান্স স্কোরও’ পাওয়া যাবে।

“এই স্কোরের ওপর ভিত্তি করে বিদেশের মত চালকের পয়েন্ট কাটা সম্ভব। তাতে তিনি ভাববেন, আইন অমান্য করে পার পাওয়া যাবে না। তিনি সাবধান হবেন।”

এই সিস্টেমে ড্রাইভিংয়ের ভিডিও রেকর্ড থাকে, লাইভ ট্র্যাকিং হয়। ‍দুর্ঘটনা ঘটলে তার প্রমাণও থাকে। চালকের পারফরম্যান্স একটি ড্যাশবোর্ডে পরেও দেখা যায়।

মহাসড়কে ডাকাতি রুখতেও এ সিস্টেমকে কাজে লাগানো যাবে বলেও মনে করেন এর উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, “সব বাণিজ্যিক গাড়িতে যখন সিস্টেমটি ব্যবহার হবে, তখন একটা শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি হবে। কোনো গাড়ি বিপদে পড়লেই কাছাকাছি হাইওয়ে পুলিশ ও অন্যান্য গাড়ির কাছে সতর্কবার্তা ও অ্যালার্ট চলে যাবে।”

কীভাবে এই চিন্তা মাথায় এল : শুভ নিজে একজন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ। দীর্ঘদিন সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেছেন দেশি বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এ। ‘যান্ত্রিক’ প্রতিষ্ঠার আগে তিনি স্মার্ট অ্যাসপেক্টস নামে একটি তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানির মালিক ছিলেন। এরপর তিনি ‘যান্ত্রিক’ নামে উদ্যোগটি নিয়ে আসেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “২০১৯ সাল থেকে এ বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করি আমি। আমার গাড়ির চালক প্রায়ই গাড়িতে ঝিমাতেন, সে বিষয়টা আমি খেয়াল করি।

“তখন আমি তার সঙ্গে কথা বলে জাগিয়ে রাখতাম। কিন্তু তিনি আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়েও চালান। আমি যখন না থাকব, তখন কী হবে? এই ভেবে সমাধানের চেষ্টা করি।

“আবার নাইট কোচগুলোতে বা রাতে যেসব গাড়ি চলাচল করে, সেগুলোতে প্রায়ই দুর্ঘটনা হয় চালক ঘুমিয়ে পড়ার কারণে। এটাও ছিল একটা বড় কারণ, ডিজিটাল ড্রাইভার বানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে।“

শুভ বলেন, “আমরা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে বেছে নিয়েছি এ কারণে যে এটি স্মার্টফোনের একটা অ্যাপ হিসেবে যে কেউ ব্যবহার করতে পারবে। আলাদা কোনো ডিভাইস ব্যবহার করতে হবে না। এতে করে খরচ যেমন কমে আসবে, তেমনি গাড়িতে এটি ব্যবহার করাটাও সহজ হবে।

“একবার গাড়িতে সেটআপ করে দিলে সিস্টেম নিজে থেকেই কাজ করে। তখন চলাককে কোনো ইনপুট দিতে হয় না।”

অ্যাপটি নিয়ে আসার পর বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগিতায় সরকারি ‍উদ্যোগ ‘লেভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড গভর্নেন্স বা এলআইসিটি’র নজরে আসে এটি। তাদের সহযোগিতায় ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের একটি বিশেষ প্রশিক্ষণেও অংশ নেন উদ্যোক্তারা।

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ২০২০ সালে সেই প্রশিক্ষণটি হয় অনলাইনে। শুভ বলেন, “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে অ্যাপটি আরও কার্যকর করে তুলতে তিন মাসের সেই প্রশিক্ষণ আমাদের দারুণ সহযোগিতা করেছে। “
যেভাবে ব্যবহার করতে হবে

যে গাড়িতে ‘ডিজিটাল ড্রাইভার’ ব্যবহার করতে হবে, সেই গাড়ির ড্যাশবোর্ডে সিস্টেমটি ইন্সটল করতে কয়েকটি জিনিসের প্রয়োজন হবে।

এ জন্য লাগবে একটি স্মার্টফোন, যেটি খুব বেশি দামি হতে হবে, এমন নয়, ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা দামের একটা স্মার্টফোনই যথেষ্ট।

লাগবে স্মার্টফোন হোল্ডার, কার চার্জার এবং ইন্টারনেট কানেকশন প্যাকেজসহ একটি সিম।
ব্যবহারকারীরা যা বলছেন

ভাড়ায় প্রাইভেটকার চালান নুরে আলম। যাত্রীর সুবিধামত সময়ে ছুটতে হয়। ফলে যাত্রাপথে প্রায়ই ঝিমুনি এসে যায় তার।

তিনি আরেকজন গাড়ি চালকের কাছ থেকে ‘ডিজিটাল চালক’ এর বিষয়ে জানতে পারেন। পরে এর সুবিধা দেখে তাৎক্ষণিকভাবে সেবাটি নিয়ে নেন।

নূরে আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এক মাস ধরে চালাই। বিষয়টা ভালোই।”

কেমন ভালো?- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “চোখ বুজলেই অ্যালার্ম বাজে, ওভার স্পিড হলেও সিগন্যাল দেয়।“

রেন্ট এ কারে গাড়ি চালানো মনিরুল ইসলাম বাবুও সপ্তাহ দুয়েক আগে অ্যাপটি ইন্সটল করেছেন। তবে এখনও পুরোপুরি ব্যবহার শুরু করেননি।

তিনি বলেন, “আমার গাড়িতে মোবাইল রাখার জন্য স্ট্যান্ড নাই। তাই মাঝেমধ্যে ব্যবহার করি।”

কেন তাহলে অ্যাপটা নিলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ফেইসবুকে একটা ভিডিও দেখেছি। দেখলাম সামনে বিট (ঝামেলা) থাকলে বলে। তাই ট্রায়াল দিলাম। মাঝেমধ্যে ব্যবহার করি। আশা করি ভালো হবে।“

মোটর সাইকেলে অ্যাপটি ব্যাবহার করেন রোকন্জ্জুামান। তিনি বলেন, “একসঙ্গে অনেকগুলো সুবিধা পাওয়া যায় এই অ্যাপে। তাই আমি এটা ব্যবহার করি। এটা না থাকলে একেকবার একেকটা ব্যবহার করতে হত।’

যান্ত্রিকের উদ্যোক্তা শুভ জানান, দেশে ও বিদেশের প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার ব্যবহারকারী তাদের এই অ্যাপ ব্যবহার করছেন।

তিনি জানান, গাড়ির ক্ষেত্রে এই অ্যাপ ব্যবহারের ফি মাসে ৩০০ টাকা এবং মোটর সাইকেলের ক্ষেত্রে ৪৯ টাকা। তবে বিনামূল্যের একটি ভার্সনও আছে। তাতে সুবিধা কিছুটা কম।

এখন পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের বেশিরভাগই বিনামূল্যের ভার্সনটি ব্যবহার করছেন বলে জানান শুভ।

তিনি বলেন, “যদি গাড়িতে এই সিস্টেমটিকে বাধ্যতামূলক করা হয়, তাহলে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা অনেক কমে যাবে, তাতে আমি নিশ্চিত।”

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
#
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat